“শিশুটিকে বাচাঁতে প্রয়োজন বিশাল অঙ্কের টাকা। পরিবার আর্থিক অস্বচ্ছতার কারণে করাতে পারছেন নাহ চিকিৎসা।তবে সাধারণ, উচ্চ বিত্তবান ও মধ্যবান মানুষ এগিয়ে আসলে স্বভাবিক হয়ে উঠবে শিশুটি। তাকে বাচাঁতে সবাইকে হাত বাড়ানো আকুতি জানিয়েছেন শিশুটি বাবা,মা”
আকাশ মারমা মংসিং>>
জন্মের পর থেকে বিরল রোগে ভূগছে সাড়ে তিনমাস বয়সের শিশু নুচিং মং মারমা। যার চিকিৎসা করতে প্রয়োজন কয়েক লাখ টাকা। কিন্তু নুন আনতে পান্তা পুরোয় যে পরিবারে, সেখানে লাখ টাকায় সন্তানের চিকিৎসা করানো যেন এক দিবাস্বপ্ন। তবে বিত্তবানদের সহযোগিতা পেলে স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে পারে শিশু নুচিং মং মারমা—এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন শিশুটির বাবা ম্রানু মং মারমা।
ম্রানু মং মারমা পেশায় একজন দিনমজুর। বান্দরবান শহর থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে কুহালং ইউনিয়নের অবস্থিত ডুলুপাড়া গ্রামের একটি বাঁশের তৈরি মাচাং ঘরে ম্রানু মং মারমা ও সানু চিং মারমা দম্পতির বাস। চলতি বছরের ১৭ মে বুধবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে জন্ম হয় তাদের সন্তান নুচিং মং মারমার। কিন্তু ভাগ্যের পরিণতি নিষ্ঠুর। জন্মের পর শিশুটির মাথা ছিল বড়। ডাক্তারের ভাষায় বলা হয়”হাইড্রোকেফালাস” অর্থাৎ সাধারণত ছোট বাচ্চাদের মস্তিষ্কে তরল তৈরি হয়, যা মাথা বড় করে এবং কখনও মস্তিষ্কের ক্ষতি করে। যার ফলে শিশুটি শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে বারবার অসুস্থ হয়ে পড়ছে। আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে নিয়মিত চিকিৎসা করতে না পেরে শিশুটিকে বাঁচাতে বিত্তবানদের সহায়তা কামনা করেছেন শিশুটির মা-বাবা।
বিরল রোগ নিয়ে এভাবে ঘুমিয়ে আছে শিশুটি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ডলুপাড়া (ম্রংখ্যেয়াহ) পাড়া স্কুল পাশে দিনমজুরের বাড়ি। পরিবারের সদস্য বাবা মাসহ মোট ৬জন। শিশুটি ঘুমিয়ে আছে মাচাং ঘরে উপরে। শিশুটির মাথা বিশাল আকৃতির। তবে মস্তিষ্কের ভিতর তরল পানি৷ শিশুটি মাথা ভারী বলে মা কোলে নিতে পারছেন নাহ। বাবাও অসুস্থ। তবুও বাবা শিশুটিকে নিয়ে মায়ের কোলে দিয়ে ঘুমিয়ে দুধ খাওয়াচ্ছেন। মাথা আকৃতি বড় হওয়াতে চোখ দুটো নেমে এখন সাদা ভরা। শিশুটির মাথায় আলো দিলে স্পষ্ট দেখা যাগ মস্তিষ্কের শুধু তরল পানি। না পারছে শিশুটি দেখতে না পারছে পৃথিবীর আলো দেখতে। অসহায় জীবনেই শিশুটিকে বাচাঁতে আকুতি জানান পরিবার পরিজন।
স্থানীয়রা জানান, পরিবার গরীব হওয়াতেই শিশুটির চিকিৎসা জন্য গ্রামের পরিবার থেকে টাকা তুলে দেওয়া হচ্ছে। তবে সেই টাকা দিয়ে এখনো হয়নি চিকিৎসার খরচে ব্যবস্থা। বিত্তবান ও সাধারণ মানুষ আর্থিক সহায়তা জন্য এগিয়ে আসলে শিশুটিকে বাঁচানো সম্ভব। বেড়ে উঠবে স্বাভাবিক শিশুদের মতন।
শিশুটি মাথায় আলো দিলে দেখা মিলে তরল ভরা পানি।
কথা হয় শিশুটির বাবা ও মা ম্রানু মং মারমা ও সানু চিং মারমার সাথে। তারা বলেন, আমরা খুবই গরীব। দিনে এনে দিনে খায়। জন্মের পর বাচ্চাটি জন্ম হয়েছে বিরল এক রোগে। যত বয়স বাড়ছে ততই মাথা বেড়ে চলছে। এনিয়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হলে চট্টগ্রাম হাসপাতালের নিউরোলজিকাল বিভাগে দেখানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে আর্থিক অস্বচ্ছতার কারনে চট্টগ্রামে গিয়ে চিকিৎসা করানো সম্ভব হচ্ছে না।তাই ছেলেকে বাঁচাতে সমাজের বিত্তবান ও সরকারি সহায়তা কামনা করেন বাবা মা।
১নং কুহালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মংপু মারমা বলেন, ঢলুপাড়া এলাকার দিন মজুর ম্রানু মং মারমা’র ছেলেকে দেখেছি এবং এটা আসলেই হ্রীদয় বিদারক। এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে তাকে সহায়তা করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।এছাড়া শিশু নুচিং মং এর চিকিৎসা খরচ যোগাতে জেলা পরিষদ, সমাজ সেবাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সাহায্যের জন্য আবেদন করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বান্দরবান সদর হাসপাতালে শিশু কনসালটেন্ট ডা: মাহামুদ আল ফারাবী জানান, এই রোগকে বলা হয় হাইড্রোকেফালাস”। জন্মের পর শিশুটি মাথায় তরল আকারে পরিণত হয়। যত বয়স বাড়বে ততই বড় আকারে ধারণ করবে। তবে এর চিকিৎসা চট্টগ্রাম সচারাচর হয়ে থাকে। অপারেশন সময় মাথা থেকে একটি পাইপ ব্যবহার করে শরীরে সাথে এটাচ করে দেওয়া হয়। যাতে ওই তরল পানি চলাচল করতে পারে।
বান্দরবান সদর নির্বাহী অফিসার উম্মে হাবিবা বলেন, এই বিরল রোগের আক্রান্ত শিশুটি খবর শুনেছি। ওই এলাকার জনপ্রতিনিধিকে খোজ নিতে বলা হয়েছে। আম নিজেই যাবো দেখতে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে যতটুকু সহযোগীতা করা দরকার সেটি সর্বোচ্চভাবে সহযোগিতা থাকবে।