নিজস্ব প্রতিনিধি >>
বান্দরবানের গত ২৬ বছরের তুলনায় এবার বন্যার সর্বোচ্চ রেকর্ড পরিমান ক্ষয়ক্ষতির চিত্র উঠে এসেছে। বান্দরবানে টানা ৬ দিন বৃষ্টির শেষে নেমে গেছে বন্যার পানি। তবে এখনো বেশ কয়েকটি এলাকায় পানিবন্দি হাজার হাজার মানুষ । জেলা শহরে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর ফুটে উঠেছে ক্ষয়ক্ষতির আসল চিত্র। বান্দরবান জেলায় কি পরিমান ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা চিত্র দেখলেই বোঝা যায়।
এদিকে এই বন্যায় নষ্ট হয়ে গেছে ক্ষেতের ফসল, শিক্ষার্থীদের বইপত্র ও ভেঙ্গে গেছে কয়েক হাজার বাড়িঘর। রাস্তাঘাটের বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গনের পাশাপাশি খানাখন্দের সৃষ্টি হয়ে চলাচলের ক্ষেত্রে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বন্যা কবলিত এলাকার বাসিন্দাদের। যার ফলে ওইসব এলাকার বেশিরভাগ বাসিন্দাদের বসবাস এখন খোলা আকাশের নীচেই ।
অন্যদিকে, বন্যা কবলিত এলাকার বেশির ভাগ উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর বইপত্র পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে যাওয়ায়। আসন্ন উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় এসব শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহন অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি পর শুন্য থেকে কিভাবে ঘুরে দাঁড়াবে এই নিয়ে চিন্তায় পড়েছে জেলাবাসীন্দারা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বান্দরবানের সাঙ্গু নদী ঘেষে কয়েকশত বসতঘর রয়েছে সেগুলো এই বন্যের প্লাবিত হয়েছে। বৃষ্টির পানি নামার পর ভেঙ্গে গেছে কয়েকহাজার বসতঘর। অধিকাংশ বাড়ি ভেসে যাওয়াতেই এখনো ঘরে ঢুকতে পারছেন নাহ অনেক মানুষ। খোলা আকাশের নীচে পড়ে আছে আসবাবপত্র। শুধু তাই নয় রুমা- থানচি সড়কের সড়কের বেহাল দশা। থানচি সড়কের চিম্বুক পোড়া পাড়া এলাকায় প্রায় ১০ একরের মতন ভেঙ্গে গেছে সড়ক ও নষ্ট হয়ে গেছে জুমের ফসল। রুমা সড়কেও একই চিত্র। ওয়াইজংশনের পর থেকে জামিনি পাড়া এলাকা পর্যন্ত ভেঙ্গে গেছে সড়ক পড়ে আছে রাস্তার উপর মাটি। তবে সড়কের যান চলাচল স্বাভাবিক করতে ২০ ইসিবি সেনাসদস্যরা মাটি সরাচ্ছেন ভারী যন্ত্র সাহায্যে। কবে নাগাদ যানচলাচল করতে পারবে সে ব্যাপারে এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি সেনা সদস্যরা।
বান্দরবান- থানচি সড়কের পোড়া পাড়া এলাকায় ১০ একর সড়কের ভাঙ্গন।
চিম্বুক ২০ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন ওয়ারেন্ট অফিসার রাহুল হাসান পার্থ বলেন, সড়ক যোগাযোগ সচল রাখতে সকাল থেকে সেনা সদস্যরা সড়কের মাটি সরিয়ে নিচ্ছেন চিম্বুক ওয়াইজংশন পর্যন্ত। এরপর থেকে সেনা দুটি টিম রুমা- থানচি সড়কের মাটি অপসারণের কাজ করে যাচ্ছে। তবে থানচি সড়কের পোড়া পাড়া এলাকায় যে সড়কের ভেঙ্গে গেছে সেটি বিকল্প হিসেবে অন্যস্থানে পাহাড় মাটি কেটে সড়ক যোগাযোগের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান তিনি।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, সদর, লামা,আলীকদম, রুমা,রোয়াংছড়ি ও থানচিসহ এই বন্যের ডুবে গেছে কয়েক হাজার বাড়িঘর ক্ষয়ক্ষতির পরিমান ছেড়ে গেছে কোটি টাকার উপরে । বেশীর ভাগই ক্ষতি হয়েছে লামা উপজেলায়। তবে প্রশাসন এখনো ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নিরুপম করা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়াও রুমা সড়কের যোগাযোগ বন্ধ থাকলেও বিকল্প হিসেবে নৌপথ দিয়ে যাতায়াত করছেন সাধারণ মানুষ। এদিকে পানি কমে যাওয়াতেই চট্টগ্রাম – কক্সবাজার ও ঢাকার দূরপাল্লার বাস চলাচলের স্বাভাবিক হয়েছে। তবে এই বন্যের দুর্ভোগের সময় দেখা যায়নি রেড ক্রিসেন্ট, স্কাউট ও রাজনৈতিক অঙ্গসংগঠনের কর্মীদের। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বন্যার কবলিত সাধারণ মানুষ।
“প্রশাসনের তথ্যনুযায়ী, চলতি বছরের টানা বৃষ্টিতে ১৫ হাজার ৮০০টি পরিবারের ৬৮ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছিলো। বন্যের পানিতে ডুবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাড়ে তিনহাজার বসত বাড়িঘর। নষ্ট হয়ে গেছে ৯ হাজার ৮শত ৫৫হেক্টর ফসলি জমি। তাছাড়া বিভিন্ন জেলায় উপজেলায় পাহাড় ধ্বসের প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ১০জন। তাছাড়া প্রশাসন হতে জেলায় ২ লক্ষ ৬০ হাজার লিটার বিশুদ্ধ খাবার পানি বিতরণ , ত্রান ১৬৮ মেঃটন চাল ও ৬ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের হতে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রান সহায়তা প্রদানের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২৪ লক্ষ টাকা, এছাড়া সেনাবাহিনীর পক্ষ হতে ৫৩,৮০০ লিঃ বিশুদ্ধ খাবার পানি বিতরণ করা হয় ”
বন্যার কবলিত ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বছরে সাঙ্গু নদীর পানি বাড়ানো দেখে হতবাক হয়েছেন তারা। এমন ভয়াবহ বন্যের রুপ নিবে এমনটি ছিল সকলের কল্পনার বাইরে। টানা বৃষ্টিতে অনেকেই বের করতে পারেনি ঘরের মুল্যবাদ জিনিসপত্র। কিন্তু রাতেই উজান থেকে নেমে আসা সাঙ্গু নদীর পানি বেড়ে যাওয়াতেই জেলা শহরে সরকারী অফিস, বাড়িঘর, পুলিশ বাংলোসহ সরকারী -বেসরকারী প্রতিষ্ঠানসহ বান্দরবানের অর্ধেক শহর পানিতে তলিয়ে দেয়। ক্ষতি হয়েছে কোটি টাকা উপরে।
বান্দরবান -রুমা সড়কের জামিনি পাড়ায় সড়কের ভাঙ্গন।
রুমা, থানচি,লামা, আলীকদম ও সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সাথে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বছরের টানা বৃষ্টিতে কয়েক হাজার গ্রাম তলিয়ে গেছে। নষ্ট হয়ে গেছে ঘরবাড়ি,ফসলি জমিসহ যোগাযোগের সড়কের ব্যবস্থা। সরেজমিনে পরিদর্শন করে সম্পুর্ন পরিস্থিতির সেনাবাহিনী ও জনপ্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। যে কোন দুর্যোগে মোকাবেলা ও সহযোগিতার জন্য উপজেলা কন্ট্রোলরুম সাথে যোগাযোগ স্থাপনে আহব্বান জানিয়েছেন তারা।
বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, চলতি বছরে বন্যের পানিতে কয়েক হাজার বাড়িঘর ও ফসলি জমি ডুবে গেছে। জেলা সদর চেয়ে লামা উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঘরবাড়ি পাশপাশি রাস্তার ঘাট ভেঙ্গে গেছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা নিরুপম করে দ্রুত প্রস্তুত করা হবে। আর ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ দেওয়া ও পুর্নবাসন করা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
উল্লেখ্য, ১৯৯৭ ও ২০১৯ সালে বান্দরবান জেলায় বন্যা হলেও চলতি বছরের বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ রেকর্ডের মাত্রা ছাড়িয়েছে। অন্য দুইবছরের তুলনায় চলতি তুলনামূলক অনেক বেশী। দীর্ঘ ২৬ বছর পর এমন বন্যে পরিস্থিতি দেখে হতবাক জেলাবাসিন্দারা।