আকাশ মারমা মংসিং >>
পার্বত্য অঞ্চল বান্দরবান জেলায় সমতল ও দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় ৫ লাখেরও বেশী ১১ টি জনগোষ্ঠির বসবাস। কেউ সমতলে বসবাস আবার কেউ দূর্গম পাহাড়ি এলাকায়। পাহাড়িদের একমাত্র প্রধান উৎস জুম চাষ। পাশপাশি বিভিন্ন পাহাড়ের বাহারি রকমের ফলমুল চাষ করে জীবনযাত্রার মান বয়ে চলে।
সেসব দুর্গম এলাকার বসবাসরত জনগোষ্ঠিদের মুল মুখ্যপাত্র হল পানি। পানির জন্য ওই এলাকার গুলোতে দেখা দিয়েছে করুন অবস্থা। দীর্ঘ কয়েক মাইল পাড়ি দিয়েও দেখা নাই পানির উৎস। ফলে পানি জন্য চরম সংকটে মুখোমুখি হতে হচ্ছে সেসব পাহাড়ি এলাকায়। তবে এখন ঝিড়ি গুলোতে পানি সংকট স্থায়ী নিরসনের জন্য বাঁধ নির্মান প্রকল্পের নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসন।
জানা গেছে, পানি সংকট স্থায়ী নিরসনের জন্য বাঁধ নির্মান প্রকল্পের একটি বরাদ্ধ নেওয়া হবে জেলা প্রশাসনের উদ্যেগে। জেলা প্রশাসন, পার্বত্য উন্নয়ন বোর্ড ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তরসহ যৌথ উদ্যেগে পানি উৎস যেখানে পাওয়া যায় সেসব স্থানগুলোতে পরিদর্শন করেছে উর্ধতন কর্মকর্তারা। ঝিড়িগুলোতে যেখান থেকে পানি উৎস প্রবাহিত সেসব স্থানে কয়েকটি বাঁধ নির্মাণ করা হবে বলে জানা গেছে। যেখানে প্রতি মৌসুমে পাহাড়ি এলাকায় পানির সংকট দেখা দেয় সেসব এলাকায় গুলোতে স্থায়ী সমাধান হিসেবে বিভিন্ন বর্ষাকালে সময় যে পানি গুলো আসে সেগুলোকে বাঁধ দিয়ে পানি গুলোকে ধরে রাখা ব্যবস্থা করা হবে।এমন উদ্যেগ নেওয়াই খুশি স্থানীয়রাও।
সরেজমিনে দেখা গেছে,চিম্বুক সড়কের ম্রোলং পাড়া,বেথনী পাড়া, গেসমনি পাড়া,নোয়াপাড়া, বসন্ত পাড়াসহ আরো কয়েকটি গ্রামে পানি সংকট নিরসনের জন্য দেওয়া হচ্ছে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ। প্রশাসন, সেনাবাহিনী, ছাত্রলীগসহ গণমাধ্যম কর্মীরাও এসব কাজে মাঠে নেমে পড়েছে। দেওয়া হচ্ছে গ্রামে গ্রামে সুপেয় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ। পৌরসভার গাড়ি করে দুই হাজার লিটার ভর্তি ট্যাংকি ভরে গ্রামে গ্রামে পানি সরবরাহ করায় কিছুটা পানি স্বস্তিতে ফিরেছে পানির সংকটে থাকা গ্রামগুলো। এতে খুশি মনে পানি নিতে সেসব পাহাড়ি জনগোষ্ঠিরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
ম্রোলং পাড়া বাসিন্দা মেনু ম্রো বলেন, পানি সংকট থাকলেও এখন কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। গ্রামে গ্রামে সেনাবাহিনী, প্রশাসনসহ গণমাধ্যম কর্মীরাও বিশুদ্ধ পানি দিয়ে যাচ্ছে। এতে আমাদের অনেক উপকার হচ্ছে।
নোয়াপাড়া কারবারী রেচুং ম্রো বলেন, পানি সংকটে ভূগছি। ঝড়না থেকে একটু একটু পানি পেলেও সেটি নোংরা। সেই কারণে জেলা প্রশাসক ঝিড়িগুলো পরিদর্শন করেছেন। আর যেখানে পানি পাওয়া যায় সেখানে একটি বাঁধ নির্মাণ করা হবে বলেছেন। এতে পাড়াবাসী খুবই খুশি।
বান্দরবান জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর নির্বাহী প্রকৌশলী শর্মিষ্টা আচার্য্য বলেন, ঝিড়িগুলোতে আগে অনেক পানি ছিল কিন্তু এখন পানি নাই। সেই ঝিড়িতে কিভাবে পানি ধরে রাখা যায় সেভাবে স্থায়ী বাঁধ নির্মান করা জন্য জেলা প্রশাসক, উন্নয়ন বোর্ড ও পৌরসভাসহ পরিদর্শন করা হয়েছে। তাছাড়া ঝিড়িগুলোতে কিভাবে বাঁধ দেওয়া যায় সেটি নিয়ে উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তারা সার্ভেয়ার করবে এবং পানি যাতে দীর্ঘ মেয়াদের পানি রাখা যায় সেটাই মুল উদ্যেশ্য।
বান্দরবান জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভিন তিবরীজি জানান, চিম্বুক এলাকায় যে পানি সমস্যা সেটি চলমান রয়েছে। সে সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে প্রশাসন, সেনাবাহিনী, উন্নয়ন বোর্ড, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ও পৌরসভাসহ পানি দেওয়ার ব্যবস্থা করে যাচ্ছে। কিন্তু এটি সাময়িক সমস্যা জন্য কাজ চলছে। তাছাড়া বর্ষা মৌসুমে পানি গুলোকে কিভাবে ধরে রাখা যায় আর পানি উৎস কোথায় আছে সেটি নিয়ে উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যে সার্ভেয়া করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, যেসব এলাকায় পানি সংকট সেসব এলাকার ঝিড়িতে একটি বাঁধ দিয়ে যদি দীর্ঘ মেয়াদী পদ্ধতিতে পানি সরক্ষন করতে পারি তাহলে আশেপাশে পাড়াবাসী সেখান থেকে পানি নিয়ে যেতে পারবে। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি আর আশা করছি সে সুফল আসবে। আর স্থায়ী সমাধান হিসেবে বিভিন্ন বর্ষাকালে সময় যে পানি গুলো আসে সেগুলোকে বাঁধ দিয়ে পানি গুলোকে ধরে রাখা ব্যবস্থা করা। আর সেই পানিগুলো পাড়াবাসীরা ব্যবহার করবে।