আকাশ মারমা মংসিং >>
পার্বত্য চট্টগ্রাম একটি জেলা হিসেবেই নয়, বাংলাদেশের সেরা দর্শনীয় স্থানগুলোর জেলা হিসেবেও বান্দরবান জনপ্রিয়। যেখানে ভ্রমণ পিপাসুরা সুযোগ পেলে পাড়ি জমে প্রাকৃতিক সবুজের ঘেরা পর্যটন নগরী খ্যাত বান্দরবানে। এ জেলাতেই রয়েছে ১১টি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর স্বাতন্ত্রিক জীবন ধারা, প্রথা, কৃষ্টি ও বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতির সহাবস্থান। এই নৈসর্গিক জেলায় রয়েছে অসংখ্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য স্পট। পাহাড়ের আনাচে-কানাচে লুকিয়ে রয়েছে ইতিহাস ও ঐতিহ্য। এই জেলায় প্রতি মৌসুমে কিংবা ঈদের দিনের বেড়াতে আসেন কয়েক লাখ পর্যটক।
কিন্তু সেটি এখন দেখা মিলছে ভিন্ন রকমের চিত্র। তিন উপজেলার নিষেধাজ্ঞা ফলে এবার ঈদের আশানুরূপ পর্যটদের সাড়া নাই পার্বত্য জেলা বান্দরবানের। তাছাড়া অতি তীব্র তাপদাহের ফলে বান্দরবান ভ্রমণে পর্যটকদের অনীহা। পর্যটকদের সেবায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়ার পরও জেলার দেড় শতাধিক হোটেল-মোটেল, রিসোর্টে ঈদের ছুটিতে পাঁচ শতাংশও বুকিং হয়নি বলে জানিয়েছেন পর্যটনের জড়িত সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
জানা গেছে, গত বছরে ১৭ অক্টোবর পর্যটকদের নিরাপত্তার স্বার্থে ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা জারি করেন প্রশাসন। পরে জনস্বার্থে নিরাপত্তার জন্য দফায় দফায় বাড়িয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। সর্বশেষ চলতি মাসে ১৬ মার্চ রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি তিন উপজেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য পর্যটন ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে স্থানীয় প্রশাসন।
নবনির্মিত – সুই এন থ্রি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঈদের প্রথম ও দ্বিতীয় দিনেও নিলাচল, মেঘলা, শৈলপ্রপাত,নীলগিরিসহ তেমন পর্যটকদের আনাগোনা দেখা যায়নি। বেশীর ভাগই ঘুরতে আসা স্থানীয় লোকজন। দুর-দুরান্ত থেকে ঘুরতে আসলেও তাদের মুলত আকর্ষণ ছিল দেবতাকুম,তুমাতঙ্গী, নাফাকুমসহ হাইকিং স্থানে পর্যটন স্পট গুলো।
তাছাড়া প্রাণ কেন্দ্রীক বান্দরবান শহরে হোটেল মোটেল গুলোতেও পর্যটকদের আগমন ছিল শুন্যরুপ। হোটেল- মোটেল গুলোতে পাচঁ শতাংশের কমই ছিল বুকিং। আবার কিছু হোটেলে গুলোতে পর্যটক না হওয়ায় বেতন দেওয়া নিয়ে চিন্তার ভাজ। যার ফলে আশানুরুপ পর্যটক আগমন না ঘটায় বিপাকে পড়েছে ব্যবসায়ীরা। এর ফলে প্রতিদিন হোটেল- মোটেল ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের গুনতে হচ্ছে লাখ টাকার ক্ষতির পরিমান। তাছাড়া পছন্দের পর্যটন স্পট গুলোতে ঘুরতে পারায় হতাশ প্রকাশ করেছেন পর্যটকরাও।
একই চিত্র দেখা মিলেছে পাহাড়ের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে ছুটে চলা একমাত্র মাধ্যম চান্দের গাড়ি। নিষেধাজ্ঞা ফলে কোন পর্যটক সাড়া না থাকায় সেসব গাড়ি চালকরা অলসতা সময় পাড় করছেন ষ্টেশন গুলোতে। এর ফলে সংসারের হাল টানতে হিমসিম খেতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পেশাদার গাড়ি চালকরা।
“এই নিষেধাজ্ঞা কারণে ক্ষতি পরিমান গুনতে হয় প্রতিদিন ১৫ লক্ষ টাকা। জেলার সকল হোটেল- মোটেল মিলে প্রতিমাসে আর্থিক ভাবে ক্ষতি হচ্ছে ১৫ কোটি টাকা” “সিরাজুল ইসলাম” – সাধারণ সম্পাদক, হোটেল-মোটেল মালিক সমিতি।
নিলাচল, মেঘলা, শৈপ্রপাত ও নীলগিরিতে ঘুরতে আসা কয়েকজন পর্যটকরা জানান, বান্দরবান শহরে প্রবেশ মুখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলেছিলেন শহর ছাড়া তিন উপজেলায় ভ্রমনের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। যার ফলে বিভিন্ন পর্যটন স্পট গুলোতে ঘুরতে না পেরে হতাশা প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে সব পর্যটন কেন্দ্রগুলো খুলবে বলে এমনটা আশা ব্যক্ত করেন তারা।
বান্দরবান হোটেল মোটেল মালিক সমিতি সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, তিন উপজেলায় ভ্রমনের নিষেধাজ্ঞায় থাকায় পর্যটক আগমন ঘটেনি। তাছাড়া হোটেল- মোটেল গুলোতে ৫ শতাংশের মতন পর্যটক রয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা কারণে ক্ষতি পরিমান গুনতে হচ্ছে প্রতিদিন ১৫ লক্ষ টাকা। জেলায় সব হোটেল- মোটেল মিলে প্রতিমাসে আর্থিকভাবে ক্ষতি হচ্ছে ১৫ কোটি টাকা।
বান্দরবান ট্যুরিষ্ট পুলিশ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো, জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ঈদের পর্যটকদের জন্য প্রত্যেক পর্যটন কেন্দ্রে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পাশপাশি পোশাকধারী মোতায়ন রয়েছে। যাতে কোন আপত্তিকর দুর্ঘটনা না ঘটে। তাছাড়া তিন উপজেলার ভ্রমনের নিষেধাজ্ঞা ও অতি তাপপ্রবাহ কারণে পর্যটকদের আগমণ কম ঘটেছে।