আকাশ মারমা মংসিং >>
বান্দরবানের বিভিন্ন স্থানে সরকারী জায়গা জবর-দখল করে সড়কের পাশে স্থাপনা নির্মাণের পায়তারা বহুদিন ধরে। আইন তোয়াক্কা না করে সড়কের পাশে ক্ষমতা দাপটে এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের যোগসাজসে চলছে স্থাপনা নির্মাণ কাজ। সরকারি জায়গা দখল করে নিজের বলে দাবী করার যেন তাদের কাছে একটি খেলা। এসব বন্ধ করতে হলে সরষের মধ্যেকার ভূত তাড়াতে হবে।
বান্দরবান সদর উপজেলা ৪নং সুয়ালক ইউনিয়নে কয়েকদিন ধরে বেআইনিভাবে সড়ক ও জনপদের জায়গা দখল করে অবৈধভাবে পাকা ভবন নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে নুর মোহাম্মদ নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে।
সরেজমিনে দেখা যায়,বান্দরবান-কেরানীহাট সড়কের সুয়ালক ইউনিয়নের বন বিভাগের চেক পোষ্টের পাশে সড়কে ধারে ৩ ফুট দুরত্বের পাকা ভবন নির্মাণ প্রস্তুতি চলছে। সেখানে সাইড ওয়াল ঢালাইয়ের কাজ উঠে গেছে প্রায় ৩ ফুটের মতন। ঘর নির্মাণের কাজের শ্রমিক নিয়োজিত ছিল ৫ থেকে ৬ জন।
সেই জায়গা ব্যাপারে অনুসন্ধানে গেলে কয়েকজন সাংবাদিকদের ওপর চাওড়া হয় নুর মোহাম্মদ বড় ভাই নুর আলম। গলা উচ্চস্বরে সরকারি জায়গায় যেন দখলে নেওয়া প্রচেষ্টা। শেষমেস জমাবন্দি দলিলে মাধ্যমে প্রমাণ দেখাতে গেলে সেই দলিলে দেখা যায়, ৩১৪ নং সুয়ালক মৌজার ৫১৩ নং হোল্ডিং কাগজের জমাবন্দি দেখালেও সেখানে উপরে উল্লেখ করা ছিল চাষকৃত জমি (অর্থাৎ চাষ-২) । কিন্তু তাদের দাবী দীর্ঘ বছর আগে আব্দুল খালেকের নামিয় জমি খাস করে ৩০ শতক জায়গায় বন্দোবস্তী পেয়েছিলেন। তার প্রেক্ষিতে সড়কের পাশে ৩০ শতক জায়গা তাদের বলে সাফাই গাচ্ছেন নুর মোহাম্মদ নামে তার ছোট ভাই নামীয় জায়গা।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, জমাবন্দী কাগজের অনুযায়ী-দীর্ঘবছর আগে জায়গায় দাগ ছিল খালের কিনারায়। খালের পাশে জায়গায় উল্লেখ থাকলেও নদীর ভাঙ্গনের কারণের তাদের কিছু জায়গা বিলীন হয়ে যায়। জায়গায় কিছুটা কমতি দেখা দিলে সড়কের পাশে ঘর নির্মাণ করে বসবাস দাবী করেন এটি তাদের পৈত্রিক ও দলিলের জায়গায়। কিন্তু তাদের এই ঘর নির্মাণের স্থাপনের ফলে সড়ক ও জনপদের কয়েকজন কর্মকর্তা ঘর নির্মাণের বাধা ও ঘর না তোলার নোটিশ দেয় সড়ক ও জনপদের কতৃপক্ষ। কিন্তু নোটিশ কিংবা আইনকে তোয়াক্কা না করে চলমান রয়েছে ঘর নির্মাণের কাজ।
বাংলাদেশ সড়ক ও মহাসড়ক আইন অনুযায়ী, কোন সড়ক বা মহাসড়কের ৩০ ফুটের মধ্যে কোন স্থাপন নির্মাণ করা যাবে না। কিন্তু সে আইনকে ও একদম তোয়াক্কা করছে না। তাতে বোঝা যায় সরকারকে বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখিয়ে সদর উপজেলায় সুয়ালক ইউনিয়নের সড়ক ও জনপথের (সওজ) জায়গায় অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলার ঘটনায়।
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক চেক পোষ্টের এক ব্যক্তি বলেন, ঘর নির্মাণ আগে সড়ক ও জনপদের কর্মকর্তা এসে ভেঙ্গে দিয়েছিল। এবং বাড়ি স্থাপন না করতে একাধিকবার বাঁধা প্রদান করেছি।
স্থানীয় ব্যক্তি আব্দুল হাকিম বলেন, তাদের জায়গায় কাগজ একসময় রাঙ্গামাটির জেলায় ছিল। কিভাবে এখানে এসে জায়গা কাগজ বসিয়েছে সেটা বুঝতে পারছিনা। যতটুকু জেনেছি তাদের জায়গা আগে ছিল খালের কিনারে।
সরেজমিনে উপস্থিত থেকে ১ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুর ছফুর বলেন, তার ভাষ্য, আমি যতটুকু জানি এটা তাদের জায়গা। জায়গা ব্যাপারে আপনারা কিছুই বুঝেন না কি এমন প্রশ্ন উড়ে দেন! তার বাবার আমলে থাকতে এই জায়গা পেয়েছেন বলে তাঁরও দাবি।
এক পর্যায়ে সরকারি জায়গায় দখল করে ঘর বাঁধার বিষয়ে প্রশ্ন উঠলে তিনি ঘটনা ত্যাগ করে লাপাত্তা হয়ে যান।
সরকারি জায়গা অভিযোগকারী কাগজপত্র নিয়ে হাজির হয়ে নুর মোহাম্মদ দাবি তুলেন বলেন, এটা আমার পৈত্রিয় সম্পত্তি। কাগজের মধ্যে ৩০ শতক জায়গা আছে। আমাদের জায়গায় আমরা ঘর তৈরী করছি।
সরকারি জায়গা কেন ঘর তুলেছেন এই ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে জোর গলায় বলেন, কিসের সরকারি জায়গায়। অন্যরা যেহেতু রাস্তা পাশে ঘর তুলছেন? আমার জন্য আলাদা আইন কেন বারবার এই বিষয়ে উত্থাপন করেন। আমিও করবো তা সমস্যা হবে না তার এমন যুক্তি তুলেন প্রতিবেদকের কাছে।
এ ব্যাপারে জানতে ৪নং সুয়ালক ইউপি চেয়ারম্যান উক্যনু মারমা বলেন, তাদের জায়গার কাগজ আছে। জমিটি তাদের বাপ দাদার সম্পত্তি বলে আমি জানি। তবে জায়গাটি কিছুটা ঝামেলা আছে মনে হয়। তার মত লম্বা রাস্তা সেলিম নামে এক ব্যক্তি সরকারী জায়গা দখল করে আছে বলে যোগ করেন তিনি।
এব্যাপারে বান্দরবান সড়ক ও জনপদে উপ- বিভাগীয় প্রকৌশলী মো, ফারহান সাথে যোগাযোগ করা হয় মুঠোফোনে তিনি বলেন, এর আগেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে সুয়ালক বনবিভাগের চেকপোস্ট সংলগ্ন রাস্তার পাশে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণাধীন কাজটি পরিদর্শন করে তা বন্ধে ব্যাবস্থা গ্রহন করেছি। তাছাড়া তাদেরকে নোটিশ জারি করেছি। যাতে ভবিষ্যতে এই স্থানে কোন স্থায়ী নির্মাণ কাজ না করতে বলা হয়েছে। তারপর যদি তারা পুনয়ার আইনের অবজ্ঞা করে ঐ স্থানে স্থায়ী কোন অবকাঠামো নির্মাণ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যাবস্থা আমরা গ্রহণ করবো।
অনুসন্ধান রিপোর্টের আজ ১ম পর্ব।