জাহাঙ্গীর আলম কাজল, নাইক্ষ্যংছড়ি >>
শূন্যরেখা রোহিঙ্গা ক্যাম্প পুড়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিচ্ছে সরকার। নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ ও এর আশেপাশের এলাকায় অস্থায়ীভাবে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ঘুমধুম ট্রানজিট ক্যাম্পে নিয়ে আসার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) ৩৬ পরিবারের ১৮৬ জনকে সরানো হয়েছে। গত ১৮ জানুয়ারি ভোর থেকে শূন্যরেখা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গোলাগুলি শুরু হয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর আরসা ও আরএসও’র মধ্যে। পরে বিকেলে পুড়িয়ে দেওয়া হয় ক্যাম্পটি। আগুনে সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব রোহিঙ্গারা। সেইদিনের স্মৃতি মনে পড়তেই আঁতকে উঠেন রোহিঙ্গারা। এমন দুর্দশাগ্রস্ত সময়ে তাদের আশ্রয় দেওয়ায় কৃতজ্ঞ বাংলাদেশের প্রতি।
শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মিজানুর রহমান আরও বলেন, এখানে আগত যেসব রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অপরাধে জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া যাবে, তাদের ব্যাপারে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করা হবে।
অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শামসুদ্দোজা জানান, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের যাচাই-বাছাই করার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠিত হয়। সেই কমিটি ২ হাজার ৯৭০ জনের একটি তালিকা তৈরি করে। তাদের প্রথমে উখিয়ার বালুখালী ট্রানজিট ক্যাম্পে নিয়ে আসছে। পরে সেখান থেকে যারা আগে থেকেই নিবন্ধিত তাদের উখিয়া- টেকনাফের স্ব স্ব ক্যাম্পে পাঠানো হবে। বাকিদের নিবন্ধন করে বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় দেওয়া হবে।
এদিকে গেল ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে পড়ে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল। তবে সেখান থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা ঘুমধুম তুমব্রুর শূন্যরেখায় ক্যাম্প গড়ে তুলে ৬৩০ পরিবার ৪৩০০ জন সদস্যে রোহিঙ্গা । সেখানে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসলেও গত ১৮ জানুয়ারি দুই সন্ত্রাসী গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এক পর্যায়ে আগুন দেওয়া হলে পুড়ে নিঃস্ব হয়ে যায় ক্যাম্পটি। এর ফলে ঘুমধুম ইউনিয়নের পার্শ্বে তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাবু দিয়ে বসবাস করে আসছিল শুন্যরেখা নিস্ব হওয়া সেসব পরিবার গুলো।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন,“সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ আইআরসিআরসির সহায়তায় ইউনিয়ন পরিষদ সোমবার বিকালে রোহিঙ্গা সংখ্যা গণনার কাজ সম্পন্ন করেছে।“
তিনি বলেন, একজন ইউপি সদস্যের সমন্বয়ে দুদিনে মোট আটজন এই জরিপ কাজ পরিচালনা করেছে। এখানে ৫৩৭টি পরিবারে মোট দুই হাজার ৯৭০ জন রোহিঙ্গাকে পাওয়া গেছে বলে জানান তিনি।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোমেন শর্মা বলেন, তুমব্রুতে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের গণনা শেষে ৫ ফেব্রুয়ারী আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রশাসন,আরআরআরসি, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রতিনিধিরাসহ জাতীয় টাস্কফোর্স কমিটির মাধ্যমে ৩৬ পরিবারের ১৮৬ জন সদস্য কে ট্রানজিট ক্যাম্পে হস্তান্তর করা হয়েছে।