আকাশ মারমা মংসিং>>
পাহাড়ে প্রায় ৭ একর জমিতে ২০১৩ সাল থেকে মিশ্র ফসল চাষ করে এসেছেন উদ্যোক্তা সাচিংথুই মারমা। অর্থাৎ সারাবছর ফল-সবজি একসঙ্গে চাষে সাফল্য পেয়েছেন তিনি । মৌসুম ভিত্তিক পেপে, ভূট্টা, সরিষা, শসা, বাদামসহ বিভিন্ন রকমারি ফসল চাষ করে সফলতা পেয়েছেন বান্দরবান রোয়াংছড়ি উপজেলার আলেক্ষ্যং ইউনিয়নের গ্রোক্ষ্যং পাড়ার সাচিংথুই মারমা।
সাচিংথুই মারমার এই ফল-সবজির মিশ্র চাষ দেখে উৎসাহিত হচ্ছেন পাড়ার কয়েকজন। তাকে অনুসরণ করে এখন এলাকায় গড়ে উঠেছে একই ধরনের বাগান। তাছাড়া ১০-১২জন তার বাগানে কাজ করার জন্য কর্মচারী নিয়োজিত আছে। প্রতিদিন গড়ে ৪০০টাকা বেতনে তাদেরকে কাজে লাগান। এতে বেকারত্ব দূর হয়ে তারাও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। পাশাপাশি ওই এলাকার কয়েক যুবককেও আত্মকর্ম সংস্থা তৈরী করে দিয়েছেন এই উদ্যেক্তা।
সাচিংথুই জানান, পৈত্রিক সম্পদের ৭একর জমিতে দশ বছর আগে শখের বসে মিশ্র ফলন চাষ শুরু করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ওই জমিতে ধান, পেঁপে, সরিষা, ভুট্টা, সীম, শসা, বাদামসহ বিভিন্ন ফল-সবজি রোপন করেন। সেই জমিতে চাষ করে তিনি সাফল্য পান। এসব জমিতে চাষ করে প্রতিবছর প্রায় ২০ থেকে ২৫ লক্ষ টাকা আয় করেন।
তিনি জানান, সাথী ফসল হিসেবে অন্যান্য ফসলের তুলনায় চীনা বাদাম চাষ করে বেশি আয় করতে পেরেছেন। ওই এলাকার অন্যদের তুলনায় মান আর গুনে তার চীনা বাদাম জাতটা ভালো মানের। তার বাদামের চাহিদা বেশি থাকে।
চীনা বাদাম চাষ সম্পর্কে তিনি বলেন, ৩ একর জমিতে বাদাম চাষ করেছি। এলাকার অন্যরা প্রতি মন গড়ে ৭শত থেকে ৮শত টাকা বিক্রি করে থাকেন। বাদামের মান ভালো হওয়ার কারণে প্রতি মন ১০হাজার করে বিক্রি করে থাকি। প্রতিবছর খরচ বাবদ বাদ দিয়ে প্রায় ৬ লক্ষ আয় করতে পারি।
তার জমিতে চীনা বাদাম বিচি মানের প্রসঙ্গে বলেন, প্রতিবছর আমার জমি থেকে যা বাদাম উৎপাদন হয়। তা থেকেই কিছু বাদামের বিচি পরবর্তি বছর ওই জমিতে রোপনের জন্য সংরক্ষণ করে রাখি। অন্যদের তুলনায় বাদাম ভালো মানের হওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে কদর আছে। চাহিদা থাকায় বিভিন্ন স্থান থেকে এসে আমার এখান থেকেই ক্রয় করে থাকে।
চীনা বাদাম চাষে কৃষি থেকে কোন সহযোগিতা পেয়েছেন কি-না এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমার চীনা বাদাম চাষ দেখে ২০১৯ সালে নজর পড়ে কৃষিবিভাগের। তারপর কৃষিবিভাগ হতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা (এস এম এমই) তাদের তত্ত্বাবধানে ১একর জমিতে শর্ত সাপেক্ষে চুক্তিতে চীনা বাদামের ওপর প্রর্দশনী করি। তারা বিভিন্ন সময় পরামর্শ ও তদারকি করছে। এতে বিভিন্ন সময়ে অনেককিছু (সার, কীটনাশক, মজুরি খরচ ইত্যাদি) সুবিধা পাচ্ছি। পাশাপাশি আগের তুলনায় চীনা বাদামের ভালো ফলন হচ্ছে।
তিনি বলেন, ২০১৯ সালে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা (এস এম ই) প্রদর্শনী মেলায় বান্দরবান জেলার মধ্যে চীনা বাদাম প্রথম স্থান ও ২০২১ সালে তিন পার্বত্য জেলা মধ্যে ৩য় স্থান হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছি।
এক প্রশ্নের জবাবে সাচিংথুই জানান, আমার এমন উদ্যোগ দেখে এলাকার কয়েকজন উৎসাহিত হচ্ছে। ইতোমধ্যেই বিশেষ করে পূর্বে যে জায়গায় তামাক চাষ করতেন সেই জায়গায় উক্যসিং মারমা, নুচমং মারমা, মংনুচিং মারমাসহ অনেকেই একই রকম ফল-সবজির বাগান করছে। তামাক চাষের ফলে মাটির উর্বরতা কমে যায় আর পরিবেশের ক্ষতি হয় এসব পরামর্শ দিই। তাই মিশ্র চাষে ফলন করতে উদ্বুদ্ধ করি।
ব্যয়ের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাগান থেকে যা আয় করি পরিবারের ভরন পোষণের পাশাপাশি নিজের এক মেয়ে আর বড় ভাইয়ের দুই ছেলেকে লেখাপড়ার খরচ বহন করি। আর যা অবশিষ্ট থাকে, কিছু টাকা জমা রাখি।
এ বিষয়ে জানতে রোয়াংছড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাবিবুন নেছা জানিয়েছেন, সাচিংথুই মারমা একজন আদর্শ কৃষক ও বীজ উৎপাদক। তিনি ২০১৮-১৯ সাল থেকে তামাক আবাদ বাদ দিয়ে কৃষক পর্যায়ে উন্নত মানের ডাল, তেল ও মসলা ফসল উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্পের আওতায় মানসম্মত বিশেষ করে চীনাবাদাম বীজ উৎপাদন করে আসছে। তার এই বীজ এলাকার চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বান্দরবান জেলায় বিভিন্ন উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে থাকে। তিনি স্থানীয় ত্রিদানা চীনাবাদাম, সীম বীজ, শসা, পেপে চাষ করে ২০২১ সালে প্রায় ১৬লক্ষ টাকা আয় করেছেন বলে জানতে পেরেছি।