সুফল চাকমা, বিশেষ প্রতিনিধি>>
পরিত্যক্ত জড়াজীর্ণ ভবনে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে, দুর থেকে দেখলে মনে হবে একটি পরিত্যক্ত ঘর, স্কুলের সামনে জাতীয় পতাকা পত পত করে উড়ছে আর ভাঙাচোরা-জড়াজীর্ণ রুমে ক্লাসে পাঠদান চলছে। প্রতিষ্টার ৩৭ বছরেও স্কুলটি জাতীয়করণ না হওয়ার কারনে স্কুল শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে, এলাকাবাসী হতাশ ।
অতি সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় বান্দরবান জেলাশহর থেকে ২৪ কিলোমিটার, রোয়াংছড়ি উপজেলা সদর থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দুরে ৩ নং আলেক্ষ্যং ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড, রোয়াংছড়ি টু কচ্ছপতলী (পর্যটন কেন্দ্র দেবতাকুম) সড়কের পাশে বেক্ষ্যং পূর্ণবাসন পাড়া বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের চতুর্দিকে গ্রোক্ষ্যং পাড়া, আলেগই পাড়া, খামা পাড়া এবং বেক্ষ্যং পাড়াসহ ৪টি পাড়ার শতাধিক পরিবারের ছেলে মেয়ের শিক্ষালাভের একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্টান ।
বিদ্যালয়টির জরাজীর্ণ ভবণে শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে। শিক্ষিকা ড এ সাইন মারমা বলেন যেকোন মূহুর্তে বিদ্যালয়টি ভেঙে পড়বে আর বৃষ্টি হলে ক্লাসে পাঠদান করা যায় না, বৃষ্টি হলে ঢেউটিনের ছিদ্র দিয়ে পানি পড়ে। বিদ্যালয়টি জাতীয় করন ও নতুন ভবণ নির্মাণে সরকারের সদয় দৃষ্টি কামনা করেন।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, বিদ্যালয়টি এলাকার কিছু শিক্ষানুরাগী ও বনবিভাগের সহায়তায় ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্টা করা হয়। প্রতিষ্টা লগ্ন থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত বনবিভাগের অধীন পরিচালিত হয়েছিল, তারপর ১৯৯২ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত রোয়াংছড়ি সাব জোন কমান্ডারের নিজস্ব উদ্যোগে পরিচালিত হয়।
তারপর ২০০১ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত বান্দরবান জেলার স্থানীয় এনজিও গ্রাউস এর আর্থিক সহায়তায় পরিচালনা করা হয়। ২০০৫ সাল থেকে ২০১৯ পর্যন্ত কারিতাস এনজিও থেকে পরিচালনা করা হয় সেই সময় কারিতাস থেকে দুই রুমের সেমি পাকা টিনশেড করে দেওয়া হয়। স্কুল চলাকালীন বৃষ্টি হলে সব ছাত্র-ছাত্রী গাদাগাদী করে এক রুমে রাখা হয় ।
২০১৯সালের দিকে বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীর প্রদুর্ভাব দেখা দিলে স্কুলের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এলাকার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষালাভও বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে এলাকাবাসীর অনুরোধে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান থোয়াইন চ প্রু মাষ্টার ও রেইছা থলি পাড়া বৌদ্ধ বিহারাধ্যক্ষ উ ওয়াই না সারা ভান্তে বিদ্যালয় পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
সকলের সম্মতি ক্রমে চলতি বছরে উ ওয়াইনদা সারা ভান্তেকে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও অংজাই উই চাক কে সাধারণ সম্পাদক করে ৮ সদস্য বিশিষ্ট বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়। প্রত্যেক শিক্ষকের মাসিক সম্মানী মাত্র ২হাজার টাকায় তিনি কমিটির মাধ্যমে সাধারণ শিক্ষার জন্য ৫জন ও মারমা ভাষা শিক্ষার জন্য ১জন শিক্ষিকাসহ ৬ শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগ দেন। বিদ্যালয়ে বর্তমানে ৫৭জন ছাত্র-ছাত্রী অধ্যয়নরত আছেন।
শিক্ষিকা ড শৈ উ মারমা জানান তিনি এলাকার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে ২০১৯ সাল থেকে বিনাবেতনে শিক্ষকতা করছেন। এখন পরিচালনা কমিটি থেকে প্রতিমাসে মাত্র ২হাজার টাকা সম্মানী পেয়ে থাকেন। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে ২হাজার টাকায় চলা খুব কঠিন।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অংজাই উই চাক জানান চলতি বছরে তিনি দায়িত্ব পেয়েছেন, স্কুলটি চালু রাখা ও জাতীয় করনের জন্য প্রাথমিক শিক্ষাঅধিদপ্তরে যোগাযোগ করে যাচ্ছেন এবং স্কুলটি জাতীয়করণ না হওয়া পর্যন্ত স্কুলটি পরিচালনার ক্ষেত্রে বিত্তবানদের সার্বিক সহযোগীতায় এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।
বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, স্কুল কমিটির উপদেস্টা ও শিক্ষকদের বেতন দাতা থোয়াইন চ প্রু মাস্টার (৭৫) বলেন, ৩৭ বছরেও জাতীয় করন করা হয়নি, অথচ অন্যান্য জায়গায় করা হয়েছে। যারা বেতন নিচ্ছেন তাদের জন্য মাসিক সম্মানী ২হাজার টাকা কিছুই না।
কিন্তু যারা সম্মানী দিচ্ছেন তাদের জন্য অনেক। এলাকার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বিবেচনায় সরকার যদি স্কুলটি দ্রুত জাতীয়করন করে তাহলে এলাকাবাসী উপকৃত হবে, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষালাভের জীবন নিশ্চিত হবে বলে জানান এই প্রবীণ ব্যক্তি।
রোয়াংছড়ি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এস এম জাকারিয়া হায়দার জানান রোয়াংছড়ি উপজেলায় তিনি নতুন যোগদান করেছেন, কি কারনে জাতীয় করন করা হয়নি তিনি বিস্তারিত জানেন না খোঁজ খবর নিয়ে জানাবেন বলে জানান।
বান্দরবান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ শফিউল আলম বলেন রোয়াংছড়ি উপজেলা, বেক্ষ্যং পূর্ণবাসন পাড়া বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানা নেই, তবে কি কারনে এতদিনেও জাতীয়করণ হয়নি।
তিনিও আরো জানান, ধারণা করছেন জাতীয় করণ করতে যেসকল শর্ত পূরণ করা দরকার হয়ত সেই সমস্ত শর্ত পূরণ করতে না পারার কারনে জাতীয় করণ থেকে বাদ পড়েছে বলে ধারণা করছেন তিনি।