শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, ০৪:২৩ অপরাহ্ন
সর্বশেষ :
জিয়ার মাজারে শ্রদ্ধা: রাজনীতিতে সক্রিয় প্রত্যাবর্তনের ঘোষণা দিলেন ইঞ্জিনিয়ার শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহিন রুমায় কৃষকের বসত বাড়িতে আগুন, সব পুড়ে ছাই বান্দরবানে পৃথক অভিযানে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ৬ নেতা আটক দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে স্বেচ্ছাসেবকদল সদস্যসচিব আশরাফুল ফরহাদ-কে অব্যহতি সেনাবাহিনীর সহায়তায় ২ বছর পর ঘরে ফিরল বম পরিবার নারীদের জন্য নিরাপদ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে: ড. হামিদুর রহমান আজাদ থানচিতে খেয়াং নারীর মৃত্যুকে নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ চিংমা খেয়াং হত্যাকান্ডের সঠিক বিচারের দাবীতে বান্দরবানে বিক্ষোভ বান্দরবানে পাহাড় থেকে খেয়াং নারীর লাশ উদ্ধার নাইক্ষ্যংছড়ি’র ঘুমধুম সীমান্তে স্থলমাইন বিস্ফোরণে এক যুবক আহত।
বিজ্ঞপ্তি
paharkantho.com আপনাকে স্বাগতম 🤗...

নব্য ঠগিদের নিষ্ঠুর প্রতারণা

এস এম নাসিম
  • প্রকাশিতঃ মঙ্গলবার, ১৪ জুলাই, ২০২০
  • ৩১০৪৯ জন নিউজটি পড়েছেন

আমাদের দেশের মানুষ ঠকবাজ শব্দের সাথে প্রাচীন কাল থেকেই পরিচিত। শাব্দিক ভাবে এর অর্থ ধোঁকাবাজ, প্রতারক। ইতিহাসের ছাত্র হওয়ার কারণে ঠকবাজ শব্দের সাথে পরিচিতি লাভ করেছি পাঠ্যবই থেকে। ১৩৫৬ সালে ঐতিহাসিক জিয়াাউদ্দীন বারানি লিখিত ‘ফিরোজ শাহর ইতিহাস’ গ্রন্থে ঠগিদের কথা প্রথম জানা যায়।

সেই প্রাচীন কালে ভারতীয় উপমহাদেশে একদল দস্যূ ছিল যাদের কে বলা হতো ঠগি। সুকৌশলে মানুষ ঠকানোর কাজ করতো ঠগিরা। এরা ছিল বিশেষ শ্রেণীর খুনী সম্প্রদায়। এদের মতন নিষ্ঠুর আর নিপুণ খুনীর দল দুনিয়াতে শুধু নয়, ইতিহাসেই বিরল।

তারা মানুষের সরল বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে উপমহাদেশে একটি ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। ঠগিরা সাধারণত দলগতভাবে ব্যবসায়ী, তীর্থযাত্রীর কিংবা সৈন্যের ছদ্মবেশে ভ্রমণ করত এবং পথিমধ্যে অন্য তীর্থযাত্রীদের সাথে ভাল ব্যবহার করে তাদের সাথে মিশে যেত। তারপর তারা হঠাৎ করেই কোন যাত্রাবিরতিতে ভ্রমণকারীদের গলায় হলুদ রঙের কাপড় পেঁচিয়ে হত্যা করত। তার টাকা-পয়সা সব লুটে নিয়ে লাশ পুঁতে ফেলত। হিসাব অনুযায়ী, ১৭৪০ থেকে ১৮৪০ সাল পর্যন্ত একশ বছরে ঠগিরা ১০ লাখের বেশি মানুষ হত্যা করেছিল।

সময় বদলিয়েছে। ঠকদের মানুষ ঠকানোর পদ্ধতিও আধুনিক হয়েছে। আমাদের এই প্রিয় দেশটিতে কত রকম প্রতারক আর ঠকবাজের জন্ম হয়েছে তার হিসাব নেই। ভবন বা ব্রিজ নির্মাণকাজে রড়ের পরিবর্তে দেওয়া হয় বাঁশ।

বালিশ-পর্দা কাণ্ডের কথা নাইবা বললাম। আমরা দেখেছি, নকল ক্যাপসুলের কারখানা, ক্যাপসুলের ভেতরে আটা ভরে বিক্রি করা হয়েছে অ্যাসিডিটির ওষুধ হিসেবে। আপনার নামে ভুল করে টাকা পাঠানো হয়েছে কিংবা আমি বিকাশ অফিস থেকে বলছি, এ ধরনের প্রতারক চক্রের খপ্পরে অনেকেই পড়েছেন। প্রতারকদের খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব হারাচ্ছেন আমাদের বিদেশগামী যুবকেরা। জিনের বাদশাহর ফোন আসে, কথা বলে অন্যের পকেটের টাকা নিজের পকেটে ঢোকায় নেয় সুন্দর প্রতারণার মাধ্যমে।
বর্তমানে বিশ্বজুড়ে দেখা দিয়েছে মহামারি করোনা। জীবন মরণের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে করোনাকে পুঁজি করে চলছে ব্যবসা। চাল- তেল চুরি থেকে শুরু করে নকল হ্যান্ড-স্যানেটাইজার তৈরি করে বিক্রয় করা এটা মামুলি ব্যাপার।

অতীতের ঠগিরা একশ বছরে প্রাণ নিয়েছিল ১০ লাখ মানুষ। আর বর্তমানে নব্য ঠগিরা কয়েক সপ্তাহ বা মাসে নিতে চাই কয়েক কোটি মানুষের প্রাণ। ঠগিরা মানুষের গলায় হলুদ রংঙের কাপড় পেঁচিয়ে হত্যা করত আর নব্য ঠগিরা মানুষের প্রাণ নিতে করেছে শত আয়োজন।

নব্য ঠগিরা বানিয়েছে নকল ওষুধ, নকল পরীক্ষাগার, সাজিয়েছে হাসপাতাল, বানিয়েছে নমুনা সংগ্রহ এবং পরীক্ষার কেন্দ্র। তারা কোভিড-১৯ টেষ্টের নামে মানুষের কাছ থেকে নমুনা নেয়, হাজার হাজার টাকা নেয়, তারপর ইচ্ছেমতো কাউকে লিখে দেয় পজিটিভ, কাউকে নেগেটিভ। কোটি কোটি টাকা লোপাট করে কয়েক সপ্তাহে। করোনায় পজিটিভ ব্যক্তিকে নেগেটিভ সনদ দেওয়া পরিণাম কত ভয়াভহ? একজন অসুস্থ মানুষ কত জন কে অসুস্থ করেছে সেটা ভাবনার বিষয়।

যশোরের বিভিন্ন বেসরকারি পরীক্ষাগারে একই রোগের পরীক্ষার জন্য এক ব্যাক্তি একই দিনে রক্ত দিয়ে পেয়েছেন ভিন্ন ভিন্ন ফলাফল। যা উঠে এসেছে তালাস টিমের এক প্রতিবেদনে।

সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আলোচিত হচ্ছে এক ঠকবাজ কে নিয়ে। যার নাম সাহেদ। যিনি দেশের মানুষের মানুষের জীবন নিয়ে পেতেছে এক রাজকীয় প্রতারণায় ফাঁদ। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নাম ব্যবহার করে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিদের সাথে সুকৌশলে মিশে প্রতারণার ফাঁদকে করেছেন আরো শক্তিশালী। গড়ে তুলেছেন রিজেন্ট হাসপাতাল।

প্রতারক সাহেদের কয়েকটি ঠকবাজের চিত্র তুলে ধরার চেষ্ঠা করছি প্রতারণার জাদুকর সাহেদ সাবেক সেনা কর্মকর্তা পরিচয়ে ‘বিডি ক্লিক ওয়ান’, নামে একটি এমএলএম কোম্পানি খুলে হাতিয়ে নেন গ্রাহকদের অন্তত পাঁচ শত কোটি টাকা।

রাজধানীর উত্তরা এলাকায় কয়েকজন গাড়িচালকের সঙ্গে চুক্তি ছিল সাহেদের। তারা রাস্তাায় ঘুরে ঘুরে পথচারীকে চাপা দিয়ে রোগী বানিয়ে গাড়িতে করে তার হাসপাতালে রেখে চলে যেত। এভাবে একজন রোগী রেখে দিতে পারলে তাকে দেওয়া হতো আট হাজার টাকা করে। আর অচেতন অবস্থায় রোগীকে হাসপাতালের আইসিইউতে ঢুকিয়ে তার স্বজনদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা আদায় করতেন সাহেদ। তার হয়ে রিজেন্ট হাসপাতালে জনসংযোগ কর্মকর্তা তারেক শিবলী এ লেনদেন করতেন।

রিজেন্ট কথাটার মানেও বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। রিজেন্ট বলতে বোঝায় কোনো রাজ্যের অপ্রাপ্তবয়স্ক রাজার নিয়োগ করা প্রশাসক। আমাদের রাজ্যে রিজেন্টের দৌরাত্ম্য দেখতে হচ্ছে প্রতারক রুপে। রিজেন্টের রাজকীয় প্রতারণায় আমাদের অধিক শোকে পাথরে পরিনত করেছে।

তাই আমাদের রাগ-ক্ষোভ-দুঃখ কিছুটা কমানোর জন্য হুমায়ুন আজাদের কবিতার ভাষায় বলতে ইচ্ছে হয়
যে তুমি ফোটাও ফুল, বনে বনে গন্ধ ভরপুর;
সেই তুমি কেমন ক’রে বাঙলা
সে তুমি কেমন ক’রে…
দিকে দিকে জন্ম দিচ্ছো, পালেপালে শুয়োর কুকুর…

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরির আর নিউজ
© All rights reserved ©paharkantho.com-২০১৭-২০২১
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: JPHOSTBD
themesba-lates1749691102
error: Content is protected !!