বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫, ০২:৩৩ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ :
নাইক্ষ্যংছড়িতে পুলিশের অভিযানে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ঘুমধুমে যুব সমাজের উদ্যোগে রাস্তা মেরামত ঘুমধুম খাল থেকে অজ্ঞাত যুবকের পঁচনধরা মরদেহ উদ্ধার বান্দরবানের থানচি-রুমা পর্যটক ভ্রমনে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার জিয়ার মাজারে শ্রদ্ধা: রাজনীতিতে সক্রিয় প্রত্যাবর্তনের ঘোষণা দিলেন ইঞ্জিনিয়ার শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহিন রুমায় কৃষকের বসত বাড়িতে আগুন, সব পুড়ে ছাই বান্দরবানে পৃথক অভিযানে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ৬ নেতা আটক দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে স্বেচ্ছাসেবকদল সদস্যসচিব আশরাফুল ফরহাদ-কে অব্যহতি সেনাবাহিনীর সহায়তায় ২ বছর পর ঘরে ফিরল বম পরিবার নারীদের জন্য নিরাপদ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে: ড. হামিদুর রহমান আজাদ
বিজ্ঞপ্তি
paharkantho.com আপনাকে স্বাগতম 🤗...

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে প্রশাসনিক দুর্নীতি: বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য!

এস এম নাসিম
  • প্রকাশিতঃ মঙ্গলবার, ১৩ মে, ২০২৫
  • ৩৮৯০ জন নিউজটি পড়েছেন

স্টাফ রিপোর্টারঃ বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাত, বিশেষত পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, বর্তমানে এক ভয়াবহ নৈতিক ও প্রশাসনিক সংকটে নিপতিত হয়েছে। সরকারি নিয়োগনীতি, দীর্ঘদিনের প্রথা ও প্রশিক্ষণব্যবস্থার প্রতি সুস্পষ্ট অবজ্ঞা এবং ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুষ লেনদেন ও স্বজনপ্রীতির জোরালো অভিযোগ উঠেছে উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।

এ অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে আজিমপুরের মা ও শিশু স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (MCHTI), যেখানে অযোগ্য, অনভিজ্ঞ ও নন-টেকনিক্যাল এক কর্মীকে FWV- ‘ফিল্ড ট্রেইনার’ হিসেবে নিয়োগ দিয়ে দেশের মাতৃসেবা কার্যক্রমের গুণগত মানকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে।
সরকারি নীতিভঙ্গের সুস্পষ্ট প্রমাণ: গেজেট ও বিধিমালার লঙ্ঘন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অধীনস্থ প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটগুলো— আজিমপুর MCHTI / FWVTI আজিমপুর. মোহাম্মদপুর MFSTC ও লালকুঠি MCHTI— তিনটি প্রতিষ্ঠানেই “ফিল্ড ট্রেইনার” পদের জন্য ১৯৯৬ সালের সরকারপ্রণীত গেজেটে একটি কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়।

এই গেজেটে স্পষ্টভাবে বলা হয়, “শুধুমাত্র অভিজ্ঞ Family Welfare Visitor (FWV)-দের মধ্য থেকে সর্বোচ্চ ২% প্রার্থীকে এই পদে পদোন্নতি-পদায়ন করা যাবে ।” এর উদ্দেশ্য ছিল, মাতৃস্বাস্থ্য বিষয়ক প্রশিক্ষণ কার্যক্রমকে টেকনিক্যাল দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাভিত্তিক মানদণ্ডে পরিচালনা করা।


কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনা ইঙ্গিত দেয়, এই বিধান একেবারে অগ্রাহ্য করে, ঘুষ ও প্রভাব খাটিয়ে একজন অনভিজ্ঞ অফিস তত্ত্বাবধায়ককে FWV-‘ফিল্ড ট্রেইনার ’ পদে বসানো হয়েছে। মোসাম্মৎ হালিমা আক্তার: একটি বিতর্কিত পদায়নের প্রতিচ্ছবি :এই অনিয়মের মূল চরিত্র মোসাম্মৎ হালিমা আক্তার, যিনি মাত্র তিন মাস আগেও ছিলেন আজিমপুর MCHTI-এর অফিস সহকারী। হঠাৎ তাকে নওগাঁয় অফিস তত্ত্বাবধায়ক পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়।

কিন্তু নিয়মমাফিক সেখানে যোগদান না দিয়ে, মাত্র একদিনের আনুষ্ঠানিক উপস্থিতি দেখিয়ে আবার ঢাকায় ফিরে এসে আজিমপুরে নিজের পুরোনো দপ্তরেই অবস্থান নেন। এরপরই অভিযোগ উঠেছে, তিনি প্রশাসনের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সহায়তা ও আর্থিক ঘুষ লেনদেনের মাধ্যমে নিজেকে FWV “ফিল্ড ট্রেইনার” পদে পদায়ন করান। এ পদটি মূলত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও ফিল্ড অভিজ্ঞতাসম্পন্ন FWV-দের জন্য সংরক্ষিত। অথচ হালিমা আক্তারের নেই কোনো টেকনিক্যাল প্রশিক্ষণ, নেই ফিল্ড ওয়ার্কের অভিজ্ঞতা— এমনকি মাতৃস্বাস্থ্য বা নবজাতক সেবা সম্পর্কেও নেই প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান।

দুর্নীতিবাজ পরিচালক প্রশাসন এর যত দূর্নিতি : মীর সাজেদুর রহমান ও তার দুর্নীতিবাজ সহযোগীরা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সুশাসন নষ্ট করেছে। ১৯৯৬ সালের FWV নিয়োগবিধি অনুযায়ী ৮% ATFPO ও ২% ফিল্ড ট্রেইনার পদে পদোন্নতির গেজেট থাকা সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট ফাইল গায়েব করে FWVদের পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। অন্যদিকে ৩০-৩২ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন অনেক FWV ঘুষ না দেওয়ায় প্রতিহিংসার শিকার হয়ে পদোন্নতি ও পদায়ন পাননি। এই দুর্নীতিবাজ চক্রের বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন।

শীর্ষ প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর এর ডিজি কতৃক অনুমোদিত বৈধ পদায়ন ফাইল গায়েব :অভিযোগপত্র অনুযায়ী , এই অনিয়মে যুক্ত রয়েছেন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিচালক প্রশাসন মীর সাজেদুর রহমান (উপ-পরিচালক, মূল পদ), ডিডিপি এরশাদ আহমেদ নোমানী এবং এডিপি-১ ওমর ফারুক। তারা ঘুষের বিনিময়ে পছন্দের প্রার্থীকে অবৈধভাবে পদায়ন ও পদোন্নতি করে থাকেন বলে অভিযোগ উঠেছে। একাধিক FWV দাবি করেছেন, মহাপরিচালকের অনুমোদিত বৈধ পদায়ন ফাইল পর্যন্ত গায়েব করে ফেলা হয়েছে — এর মূলকারণ সংশ্লিষ্ট FWV*এর প্রতি *ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার বসবতী হয়ে এবং পরিচালক প্রসাশন মীর সাজেদুর রহমানসহ দুর্নীতিবাজ গংদের অনিয়ম দূর্নিতির বিপক্ষে আপোষহীন থাকার কারনে ।

ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন অভিজ্ঞ FWV-রা : মাঠ পর্যায়ে থাকা শত শত FWV যাদের ৩০-৩২ বছরের ফিল্ড অভিজ্ঞতা রয়েছে, তারা এখনও কোনো প্রশিক্ষণ পদের স্বীকৃতি পাননি। কয়েকজন ভুক্তভোগী বলেন: “আমরা বছরের পর বছর মাঠে কাজ করছি, স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছি— অথচ কেউ ঘুষ দিলে তারাই হয়ে যান ট্রেইনার! এটা শুধু অন্যায় না, এটা স্বাস্থ্য খাতের ভবিষ্যতের সাথে প্রতারণা।”

ঘুষ বাণিজ্যের দীর্ঘস্থায়ী চিত্র ও আরও অনিয়ম : ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২১ সালে যারা FWV পদে নিয়োগ পান, তাদের মধ্যে অনেকেই ঘুষের বিনিময়ে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ছাড়াই FWV- ফিল্ড ট্রেইনার পদে নিযুক্ত হয়েছেন। এমনকি, মোহাম্মদপুর MFSTC- এর প্রশাসনিক কর্মকর্তা AO- মাজাহারের প্রভাবে ফিরোজ আল মামুন নামক একজনকে মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে ঢাকায় এনে AO (অফিসার) পদে বসানো হয়। চাকরিবিধি অনুযায়ী এই পদায়ন অবৈধ।
প্রমাণাদি ও আইনি প্রস্তুতি : ভুক্তভোগী FWV-দের লিখিত অভিযোগ সংগ্রহ এর পাশাপাশি অডিও ও ভিডিও প্রমাণ সংগ্রহ করেছেন এ অনুসন্ধানী প্রতিবেদক । প্রমাণসমূহ সংবাদমাধ্যমের অফিসে হস্তান্তরিত করা হয়েছে এবং ভুক্তভোগী FWV রা দুর্নীতিবাজ পরিচালক প্রশাসন মীর সাজেদুর রহমানসহ এই চক্রের অন্যান্যদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

FWV সমাজ একত্রিত হয়ে আন্দোলনের রূপরেখাও তৈরি করছেন—তাদের দাবি, এই অনিয়মের বিরুদ্ধে বিচার ও ন্যায্য পদোন্নতি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। স্বাস্থ্যসেবার ভবিষ্যৎ: একটি বড় প্রশ্নচিহ্ন? স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “প্রশিক্ষণহীন ও অযোগ্য ব্যক্তিকে মা ও শিশু স্বাস্থ্যসেবার প্রশিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া কেবল নীতিগত নয়— এটি স্বাস্থ্যসেবার মান ও রোগী নিরাপত্তার বিরুদ্ধেও স্পষ্ট হুমকি।”
প্রশাসনের নিরবতা, তদন্তহীনতা এবং দায়বদ্ধতার অভাব এই সংকটকে আরও জটিল করে তুলছে।

মূল প্রশ্নাবলি: যা উত্তর চায় পুরো FWV সমাজ : ১. অভিজ্ঞ FWV-দের উপেক্ষা করে কিভাবে একজন নন-টেকনিক্যাল অফিস তত্ত্বাবধায়ককে ‘ফিল্ড ট্রেইনার’ হিসেবে পদায়ন করা হলো? এর আইনগত ভিত্তি কী?
২. ১৯৯৬ সালের সরকারি গেজেট অনুসারে যেখানে শুধুমাত্র অভিজ্ঞ FWV-দেরই নিয়োগের নির্দেশ রয়েছে, সেখানে এই নিয়ম লঙ্ঘনের দায় কার?
৩. স্বাস্থ্যখাতের স্পর্শকাতর পদে অনভিজ্ঞদের পদায়ন কি রোগীদের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলছে না?
৪. এই পদায়ন যদি অবৈধ হয়, তাহলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর কী ব্যবস্থা নিচ্ছে বা নেবে?
৫. ৩০-৩২ বছরের অভিজ্ঞতা থাকার পরও FWV-দের বঞ্চনার পেছনে প্রশাসনিক পক্ষপাত কিংবা ঘুষই কি একমাত্র কারণ?
৬. এই অনিয়মে জড়িত শীর্ষ কর্মকর্তারা কি কেবল অর্থনৈতিক সুবিধা নিয়েছেন, নাকি এর পেছনে আরও গভীর প্রশাসনিক চক্র রয়েছে?
৭. প্রশিক্ষণহীন একজন অফিস তত্ত্বাবধায়ককে গর্ভবতী নারীদের প্রশিক্ষণ প্রদানের দায়িত্ব দেওয়া হলে তার ফলাফল কী হতে পারে?
৮. বঞ্চিত FWV-দের ক্ষতিপূরণ বা পুনর্বিবেচনার কোনো প্রক্রিয়া শুরু হবে কি?
৯. এই অনিয়মের তদন্ত কবে শুরু হবে এবং কবে রিপোর্ট প্রকাশিত হবে?
১০. DGFP এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালকরা কি এ বিষয়ে অবগত? তারা কি FWV-দের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে সচেষ্ট?

সময় এখন কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার : স্বাস্থ্য খাতের নৈতিকতা, সেবার মান এবং জনস্বাস্থ্যের স্বার্থ রক্ষার জন্য এই অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে কঠোর তদন্ত ও বিচার সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে। প্রতিবেদক অভিযুক্তদের মতামত নেয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন : অভিযুক্তরা তাদের মুঠোফোন কল রিসিভ না করে বার বার কল কেটে দিচ্ছিলেন। FWV সমাজের একটাই দাবি—এই দুর্নীতিবাজ পরিচালক প্রশাসন মীর সমাজেদুর রহমান এডিপি,ওমর ফারুক/ ডিডিপি, এরশাদ আহম্মদ নোমানী ও MFSTC মোহাম্মদপুর এর ( AO- মাজাহার) সহ সকল দুর্নীতিবাজদের অধিদপ্তর থেকে অপসারণ ও তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তপূর্বক সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কতৃক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক এবং দক্ষতা, নীতি ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে স্বাস্থ্যসেবার ভবিষ্যৎ নিশ্চিত হোক।

আরো পড়ুন→বান্দরবানে কাজ না করেই প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের চেষ্টা ইউপি সদস্যের

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরির আর নিউজ
© All rights reserved ©paharkantho.com-২০১৭-২০২১
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: JPHOSTBD
themesba-lates1749691102
error: Content is protected !!