থানচি প্রতিনিধিঃ বান্দরবানের থানচির বলিপাড়া ইউনিয়নে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচির আওতায় প্রকল্পের কোন কাজ এখনো করা হয়নি। কাজ না করেই অর্থ আত্মসাতের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে।
২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে থানচি উপজেলার বলিপাড়া ইউনিয়নের গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচির আওতায় ১ম ও ২য় কিস্তি নগদ অর্থ দ্বারা বাস্তবায়িত প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। বলিবাজার জামে মসজিদের পূর্ব দক্ষিণে রাস্তার পার্শ্বে পাকা ওয়াল নির্মাণ (কাবিটা প্রকল্প নং ৬৫) প্রকল্প কাগজে কলমে কাজ চলমান থাকলেও বাস্তবে কোন কাজ করা হয়নি। হিন্দু পাড়ায় পাড়াবাসীদের পানি ব্যবহারের সুবিধার্থে পুকুর পুনঃ খনন (কাবিটা প্রকল্প নং ৪২) প্রকল্পের কোন কাজ করা হয়নি। এছাড়া মেইন রোড হইতে মাংগই ঝিড়ির রাস্তা পুনঃ নির্মাণ {কাবিখা (গম দ্বারা বাস্তবায়িত) প্রকল্প নং ১৪} প্রকল্পের কাজ না করে অর্থ আত্মসাতের চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বলিবাজার জামে মসজিদের পূর্ব দক্ষিণে রাস্তার পার্শ্বে পাকা ওয়াল নির্মাণ প্রকল্পটির কাগজে কলমে উল্লেখ করা থাকলেও বাস্তবে কোন পাকা ওয়াল নির্মাণ কাজ দেখতে পাওয়া যায়নি এবং কোন কাজ করা হয় নাই। হিন্দু পাড়ায় পাড়াবাসীদের পানি ব্যবহারের সুবিধার্থে পুকুর পুনঃ খনন প্রকল্পের কাজের কোন অস্তিত্বই খুঁজে পাইনি। এই পাড়ায় কোন পুকুর খননের কাজ ছিল না। এমনভাবে মেইন রোড হইতে মাংগই ঝিড়ির রাস্তা পুনঃ নির্মাণ প্রকল্পের কাজটিও দেখতে পাইনি। কাজের কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও বলিপাড়া ইউনিয়নের আরো বিভিন্ন এলাকায় ২৪-২৫ অর্থ বছরের গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচির আওতায় প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়নি এমনকি কাজ না করে অর্থ আত্মসাতের চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলেও স্থানীয়দের অভিযোগ।
অনুসন্ধানে জানাযায়, হিন্দু পাড়ায় পাড়াবাসীদের পানি ব্যবহারের সুবিধার্থে পুকুর পুনঃ খনন (কাবিটা প্রকল্প নং ৪২) প্রকল্প। বলিবাজার জামে মসজিদের পূর্ব দক্ষিণে রাস্তার পার্শ্বে পাকা ওয়াল নির্মাণ (কাবিটা প্রকল্প নং ৬৫) প্রকল্প। ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড মেইন রোড হইতে মাংগই ঝিড়ির রাস্তা পুনঃ নির্মাণ প্রকল্প। এইসকল কাজ উক্ত ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সজল কর্মকারের নামে বরাদ্দ করা হয়েছে।
এবিষয়ে বলিবাজার ব্যবসায়ী মোঃ আবুল কালাম জানান, বলিবাজার জামে মসজিদের পাকা ওয়াল নির্মাণ হয়েছিল গত ২/৩ বছর আগে এর পরে আমার জানামতে কোন পাকা ওয়াল নির্মাণ কাজ করা হয়নি এমনকি দেখিনি। বলিবাজারের আরেক ব্যবসায়ী মোঃ আরমান বলেন, ইদানিং মসজিদের কোন প্রকল্পের কাজ করা হয়নি। মসজিদের নিজস্ব অর্থায়নে ও বিজিবি অনুদান মাধ্যমে মাদ্রাসার উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে। এখানে প্রকল্পের কাজ চলছে বলে আমার জানা নেই।
এ-নিয়ে হিন্দু পাড়ার বাসিন্দা ডালিম ঘোষ বলেন, হিন্দু পাড়ায় পাড়াবাসীদের পানি ব্যবহারের সুবিধার্থে পুকুর পুনঃ খনন কাজ আমি দেখিনি। আমাদের পাড়ায় পাড়াবাসীদের জন্য একটি পুকুর দরকার ছিল। কিন্তু পাড়ায় ব্যক্তিগতভাবে একজনের পুকুর ছাড়া পাড়ায় কোন পুকুর নেই। হিন্দু পাড়ায় আরেক বাসিন্দা নিমাই কর্মকার বলেন, হিন্দু পাড়ায় আমার পুকুর ছাড়া অন্য কোন পুকুর আছে বলে আমার জানা নাই। কোন পুকুর পুনঃ খনন কাজ এই পাড়ায় হয়নি। পাড়াবাসিদের পানি ব্যবহারের সুবিধার্থে পুকুর পুনঃ খনন প্রকল্প কাজ করতে আমি দেখিনি।
মেইন রোড হইতে মাংগই ঝিড়ির রাস্তা পুনঃ নির্মাণ কাজ সম্পর্কে এলাকাবাসীর কিছুই বলতে পারেনি এমনকি জানেনও না এবং দেখেনও নাই বলে সাংবাদিকদের জানান।
এই নিয়ে বলিবাজার জামে মসজিদ কমিটির সহ সভাপতি মোঃ বোরহান উদ্দিন বলেন, ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের বলিবাজার জামে মসজিদ এলাকায় পাকা ওয়াল নির্মাণ হয়েছে বলে আমার চোখে পড়েনি এবং জানা নেই। তবে মসজিদের নিজস্ব অর্থায়নে মাদ্রাসা উন্নয়নের কাজ চলমান আছে।
এ-নিয়ে অভিযুক্ত বলিপাড়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য সজল কর্মকার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি সাংবাদিকদের সাথে কোন কথাই বলতে রাজি হননি।
এই নিয়ে বলিপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিয়াঅং মারমা কে জানালে তিনি বলেন, এই প্রকল্পের কাজ গুলো আমার মেম্বার ও মহিলা মেম্বারদের নামে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নিজেই বাস্তবায়ন করে দিয়েছেন। এর চেয়ে বেশি আমি বলতে পারবো না।
এই নিয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মোঃ মসফিকুর রহমান বলেন, প্রকল্পের কাজ না করে থাকলে কাজ করার এখনও সময় আছে। কাজ না করলে বিল দেয়া হবে না। কাজ না হলে প্রয়োজনে ঐ প্রকল্প ফেরত যাবে। আমি যতদিন থাকবো কাজ না করে কেউই বিল নিতে পারবে না।
এ-নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ-আল-ফয়সাল বলেন, কোন প্রকার প্রকল্পের কাজ না করে থাকতে পারবে না, আমি সরেজমিনে গিয়ে দেখবো। এখনও যদি প্রকল্পের কাজ শুরু না করে থাকলে কাজ করার সুযোগ রয়েছে, কাজ করতেই হবে। প্রকল্পের কাজ না করে অর্থ আত্মসাতের কোন সুযোগ নেই।
এ-নিয়ে এলাকার সচেতন মহল স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক সরকারের প্রকল্পগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়নের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হচ্ছে। অভিযুক্ত তালিকাভুক্ত প্রকল্পটির সরেজমিনে তদন্ত করে প্রকল্প বাস্তবায়নের আহ্বান জানানো হয়েছে।
আরো পড়ুন→সীমান্তে চোরাকারবারিদের বড় চালান ধরা, ৫০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার