সারাদেশে চিকিৎসা সেবাই চরম ভোগান্তিতে পড়েছে করোনা আক্রান্ত ও সাধারণ রোগীরা। অব্যবস্থাপনা আর চিকিৎসকদের অনীহার মধ্যেই দেড় মাস ধরে চলছে রোগীদের এই ভোগান্তি।
অভিযোগ আসছে চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সুরক্ষা যে সব সরঞ্জাম দেওয়া হয়েছে সেগুলোর যেমন ঘাটতি রয়েছে তেমনই মানসম্মত নয়। ফলে চিকিৎসা দিতে গিয়ে ঝুঁকিতে পড়তে হচ্ছে স্বাস্থ্যকর্মীদের । এ অবস্থায় চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়ন না হলে ভয়াবহ সংকটের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
অভিযোগ নয়, চোখে মুখে ক্ষোভ আর হতাশা নিয়েই স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নার্সিং সুপারভাইজার, গায়ত্রী দেবী কুন্ডু; করোনা পজেটিভ হয়ে ভর্তি হতে এসেছেন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে।
জীবনের নিরাপত্তা না থাকায় রোগীদের সেবা দিতে পিছপা’ বেশির ভাগ চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মী। রাজধানীর আরেকটি হাসপাতালে কোভিড-১৯ পজেটিভ রোগীদের সেবা দিচ্ছেন এমন একজন চিকিৎসক জানালেন অপ্রতুল সুরক্ষা সামগ্রীর কথা।
তিনি বলেন, আমাদের ডিসপোজাল পিপিই দেয়া হয়েছে। আমাদের বলা হয় এটি ধুয়ে ধুয়ে ব্যবহার করতে। কিন্তু ধুলেই কি এটি শতভাগ সুরক্ষিত থাকবে।
রোগীদের স্বজনরা জানান, রোগীরা পড়ে থাকলেও ডাক্তার নেই। একটি টেস্ট করানোর জন্যও কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। কোন ডাক্তার বা নার্স নাই। আমাদের রোগীরা কেউ কোন ঔষুধ পাচ্ছে না।
এসবই জানান দিচ্ছে, আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ার কথা।
২২শে এপ্রিল পর্যন্ত করোনা আক্রান্তের সংখ্যা পৌণে চার হাজার ছুঁই ছুঁই করছে। এরমধ্যে বাড়ি থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন আড়াই হাজারেরও বেশি। আর নয়’শজনের মতো চিকিৎসা নিচ্ছেন রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, কুয়েত মৈত্রী, রিজেন্ট, মহানগর জেনারেল, সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালসহ দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক আয়েশা আক্তার বলেন, করোনায় আক্রান্ত ৬০ ভাগ রোগীই কিন্তু বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। কারো যদি করোনার উপসর্গ থাকে তাহলে তারা বাড়িতে থেকেই আমাদের নজরদারির মাধ্যেমেই সুস্থ হতে পারবেন।
কেউবা সঠিক চিকিৎসা না পাওয়ায় রোগ নির্ণয়ের আগেই ঢুলে পড়ছেন মৃত্যুর কোলে। শুধু তাই নয়, অব্যবস্থাপনার কারণেও পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন প্রস্তুতির যথেষ্ট সময় পাওয়ার পরও এতটা খারাপ পরিস্থিতি দুর্ভাগ্যজনক। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ডাক্তারদের যথাযথ পিপিই সরবরাহ করা এবং করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় ডাক্তারদের বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে আরও সচেতন হওয়া উচিত। তিনি মনে করেন, সমন্বয়ের পাশাপাশি তদারকি জরুরি।