শনিবার, ১৭ মে ২০২৫, ১২:১৫ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ :
জিয়ার মাজারে শ্রদ্ধা: রাজনীতিতে সক্রিয় প্রত্যাবর্তনের ঘোষণা দিলেন ইঞ্জিনিয়ার শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহিন রুমায় কৃষকের বসত বাড়িতে আগুন, সব পুড়ে ছাই বান্দরবানে পৃথক অভিযানে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ৬ নেতা আটক দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে স্বেচ্ছাসেবকদল সদস্যসচিব আশরাফুল ফরহাদ-কে অব্যহতি সেনাবাহিনীর সহায়তায় ২ বছর পর ঘরে ফিরল বম পরিবার নারীদের জন্য নিরাপদ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে: ড. হামিদুর রহমান আজাদ থানচিতে খেয়াং নারীর মৃত্যুকে নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ চিংমা খেয়াং হত্যাকান্ডের সঠিক বিচারের দাবীতে বান্দরবানে বিক্ষোভ বান্দরবানে পাহাড় থেকে খেয়াং নারীর লাশ উদ্ধার নাইক্ষ্যংছড়ি’র ঘুমধুম সীমান্তে স্থলমাইন বিস্ফোরণে এক যুবক আহত।
বিজ্ঞপ্তি
paharkantho.com আপনাকে স্বাগতম 🤗...

বিশ্ব মানবতার নেতাদের লজ্জায় ফেলে দিলেন গাম্বিয়া

রিপোর্টারের নাম
  • প্রকাশিতঃ বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০১৯
  • ৩৪৩৮ জন নিউজটি পড়েছেন

গাম্বিয়া ছোট্ট একটি দেশ, আয়তন মাত্র ১০ হাজার ৩৮০ বর্গ কি.মি মাত্র। বাংলাদেশের মোট আয়তনের চৌদ্দ ভাগের এক ভাগ। এর পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসগর, বাকি তিন দিকে সেনেগাল। বর্তমানে স্যোশাল মিডিয়া থেকে চায়ের আড্ডা, রোহিঙ্গা শিবির থেকে লোকালয় সর্বত্র আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে পশ্চিম আফ্রিকার এই দেশটি। কারণ আয়তনে ছোট হলেও  দেশটি যা করেছে, তা করতে পারেনি বিশ্বের অনেক বাঘা রাষ্ট্র। রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধ বন্ধে বিশ্বের অন্য রাষ্ট্রগুলো যখন একের পর এক কথার ফুলঝুরি ছুটিয়েছে তখন গাম্বিয়া ভাগ্যাহত রোহিঙ্গাদের পক্ষে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে লড়াই করার ঘোষণা দিয়েছে। অনেক পরাশক্তির রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আন্তর্জাতিক বিচার আদলতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দিয়েছে দেশটি।

জাতিগত শুদ্ধির নামে মিয়ানমারের সামরিক শাসকেরা রোহিঙ্গাদের হত্যা, ধর্ষণ আর দেশছাড়া করার মতো জঘন্য অপরাধ করেছে। এই অপরাধের সকল আলামত হাতে পেয়েও অনেক মুসলিম দেশ যখন সাত-পাঁচ ভেবেছে তখন গাম্বিয়া নামক রাষ্ট্র চুপ করে বসে থাকেনি, তারা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মানবতাবিরোধী আর গণহত্যার অভিযোগ এনে মামলা করেছে।
দায় ছিল অনেকেরই, কিন্তু তা মেটাচ্ছে গাম্বিয়া! বর্তমানে মামলার শুনানি চলছে, আগামী ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে।

তবে আজ যে গাম্বিয়া অনন্য সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে মানবতার পাশে দাঁড়িয়েছে তাদের ইতিহাস কিন্তু মোটেও মসৃণ নয়,অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে তারা আজকের এই গণতান্ত্রিক অবস্থানে এসেছে। আফ্রিকার অন্যান্য রাষ্ট্রের মতো গাম্বিয়াও দাস প্রথার শৃঙ্খলে আবদ্ধ ছিল শতাব্দীর পর শতাব্দী,গাম্বিয়ার লিখিত ইতিহাস থেকে জানা যায়, নবম ও দশম শতাব্দীতে এখানে আরব মুসলমানরা ব্যবসায়িক কারণে আসতে শুরু করে। দাস প্রথার গোড়াপত্তন তাদের হাত ধরেই হয়,তখন গাম্বিয়া নামে কোনো রাষ্ট্রের অস্তিত্ব ছিল না,এটি ছিল মালি সাম্রাজ্যের অন্তর্ভূক্ত। চৌদ্দ শতক থেকে দেশটি ধীরে ধীরে গাম্বিয়া নামে পরিচিত হতে শুরু করে। মূলত গাম্বিয়া নদীর নাম থেকেই এই নামের উৎপত্তি।

ষোল শতকের শেষের দিকে গাম্বিয়ায় পর্তুগিজ বণিকদের আগমন শুরু হয়, এরপর আসে ব্রিটিশরা। তারপর ফরাসিরা, সতেরো এবং আঠারো শতকে গাম্বিয়ার দখল নিয়ে ফরাসি এবং ব্রিটিশদের মধ্যে একাধিকবার যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে ব্রিটিশরা জয়ী হয় এবং উনিশ শতকে এটি ব্রিটিশ উপনিবেশে পরিণত হয়, তখন এটি ব্রিটিশ গাম্বিয়া নামে পরিচিত ছিল,১৯৬৫ সালে দেশটি স্বাধীন হয়। দাওদা জাওরাকে গাম্বিয়ার জাতির জনক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাঁর নেতৃত্বে দেশটি ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে,জাওরা হন প্রজাতন্ত্রী গাম্বিয়ার প্রথম রাষ্ট্রপতি।

স্বাধীনতার পর দেশটিতে বেশ স্থিতিশীলতা বজায় ছিল কিন্তু ১৯৮১ সালে গাম্বিয়ার স্থিতিশীলতার গায়ে কালিমা লেপন করে সেনেগাল সরকার, তারা সামরিক বাহিনী প্রেরণ করে একরকম জোর করেই জাওরাকে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে বাধ্য করে এবং গাম্বিয়াকে সেনেগাম্বিয়া কনফেডারেশনে অন্তর্ভূক্ত করে। ১৯৮৯ সালে কনফেডারেট সরকারের পতন ঘটে এবং জাওরা পুনরায় ক্ষমতায় ফিরে আসেন। কিন্তু ১৯৯৪ সালে জাওরা সামরিক অভ্যুত্থানের সম্মুখীন হয় দ্বিতীয়বারের মতো,তাকে রক্তপাতহীন সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অপসারণ করে সামরিক নেতা ইয়াহিয়া জাম্মেহ। এরপর জাম্মেহ ক্ষমতা দখল করে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন দেয়, বলাবাহুল্য তিনিই নির্বাচনে বিজয়ী হন এবং দেশটিকে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করেন। ২০১৬ সালে ইয়াহিয়া জাম্মেহকে পরাজিত করে আদামা বারো ক্ষমতা লাভ করেন, পাঁচ বছর মেয়াদে তিনিই বর্তমানে গাম্বিয়ার রাষ্ট্রপতি।

গাম্বিয়া কৃষি প্রধান দেশ। রাজধানী বানজুল,দেশটির মোট জনসংখ্যা প্রায় বিশ লাখ, নাগরিকদের অধিকাংশই দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে, জনসংখ্যার ৯৫ শতাংশ সুন্নি মুসলিম। চীনাবাদাম এখানকার প্রধান উৎপাদিত শস্য এবং রপ্তানি দ্রব্য,তবে পর্যটন শিল্প থেকেও তাদের আয় হয়। আটলান্টিক মহাসাগরের তীরের গোল্ডেন বিচ, উপনিবেশিক আমলের দুর্গ,গাম্বিয়া নদী, এবং বিভিন্ন প্রজাতির বিচিত্র পাখপাখালি দেখতে প্রতি বছর পর্যটকেরা এদেশে আসেন।

কথায় বলে বেদনাহত মানুষই বেদনার ভাষা বোঝে। তাইতো গাম্বিয়ার জরাজীর্ণ পরিবেশে বেড়ে ওঠা আইনমন্ত্রী আবুবকর মারি তাম্বাদু রোহিঙ্গাদের হৃদয়ের আর্তি সম্ভবত সবচেয়ে বেশি শুনেছেন,তিনি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এই মামলার,আর মিয়ানমারের পক্ষে আছেন অং সান সুচি।

২০১৮ সালের মে মাসে ঢাকায় ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে তাম্বাদু তাঁর দেশের নেতৃত্ব দেন,ঢাকায় বৈঠকে বসার আগে কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনে গিয়েছিলেন তিনি,স্বচক্ষে উখিয়ার জরাজীর্ণ শরণার্থী শিবিরে বসে তিনি রোহিঙ্গাদের মুখ থেকে শুনেছিলেন নির্যাতনের হৃদয় বিদারক কাহিনী। সব শুনে নিজে কেঁদেছিলেন, কাঁদিয়েছিলেন অন্যদেরও,সেদিনই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন রোহিঙ্গাদের পক্ষে লড়বেন,মিয়ানমারকে মানবতাবিরোধী অপরাধে আদালতে দাঁড় করাবেন।

এরপর থেকে তাম্বাদু আন্তর্জাতিক পরিসরে যেখানেই কথা বলেছেন, সেখানেই মিয়ানমারের নৃশংসতার কথা উল্লেখ করেছেন। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে মন্তব্য করেছিলেন রুয়ান্ডার গণহত্যার সঙ্গে তিনি রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতার মিল খুঁজে পাচ্ছেন,কাজেই মিয়ানমারকে আদালতে নেয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই,তার এই কথা যে নিছক বুলি আওড়ানো ছিল না তার প্রমাণ আজকের মামলা।

আফ্রিকার মানচিত্রে সবচেয়ে ছোট দেশ গাম্বিয়া। কিন্তু ক্ষুদে এই রাষ্ট্র প্রমাণ করে দিল- গায়ে-গতরে বিশাল দেহধারী হলেই হয় না, সাহস আর লক্ষ্য ঠিক থাকলে হয়,দেখিয়ে দিলো “যদি ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলতে হয়।

গাম্বিয়ার সংবিধানের তিন নীতি বাক্য হচ্ছে- প্রগতি, শান্তি, উন্নতি,ভাগ্যাহত রোহিঙ্গাদের পক্ষে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে গাম্বিয়া প্রমাণ করেছে তারা শুধু কথার বুলি আওরায় না, বাস্তবায়নও করতে জানে।

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরির আর নিউজ
© All rights reserved ©paharkantho.com-২০১৭-২০২১
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: JPHOSTBD
themesba-lates1749691102
error: Content is protected !!